গণিতের ভয় জয় করবেন যেভাবে
গণিতের ভয় জয় করবেন যেভাবে
বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রার্থীদের খারাপ করার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে গণিতে দুর্বলতা। এ বিষয়ে ভালো করার বিভিন্ন উপায় জানিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার মো. মাহামুদুল হাসান পারভেজ ও ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার মো. দিদারুল ইসলাম। বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আগে দেখি গণিতের সিলেবাস
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) প্রদত্ত বিসিএস প্রিলিমিনারির গণিতের সিলেবাস অনুযায়ী গাণিতিক যুক্তিতে বরাদ্দ ১৫ নম্বর। সিলেবাসের বিষয়বস্তু হলো—
বাস্তব সংখ্যা, লসাগু-গসাগু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভ ও ক্ষতি, বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, বহুপদী উৎপাদক, সরল ও দ্বিপদী সমীকরণ, সরল ও দ্বিপদী অসমতা, সরল সহসমীকরণ, সূচক, লগারিদম, সমান্তর ও গুণোত্তর অনুক্রম ও ধারা, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য ও পিথাগোরাসের উপপাদ্য, বৃত্তসংক্রান্ত উপপাদ্য, পরিমিতি-সরলক্ষেত্র ও ঘনবস্তু, সেট, বিন্যাস ও সমাবেশ, পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতা।
ওয়েবসাইটে গণিত প্রস্তুতি
গণিতের প্রস্তুতির জন্য দারণ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। গণিতের বেসিক ঝালাই এগুলো বেশ কাজে দেবে। অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে গণিতে নিজের দক্ষতা পরীক্ষা বা মূল্যায়নেরও সুযোগ রয়েছে। এমন সাইটের তালিকায় আছে Basic-mathematics.com, indiabix.com, majortests.com, examveda.com, gmatclub.com, brilliant.com ইত্যাদি।
শর্টকাট জানা জরুরি?
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে গণিতের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত অঙ্ক সমাধান করার জন্য অনেকেই শর্টকাট নিয়ম শিখে রাখেন। শর্টকাট নিয়ম জানা থাকলে ভালো। এর ফলে কম সময়ে দ্রুত অঙ্ক করে ফেলা যায়। তবে শর্টকাট জানুন আর না-ই জানুন, বিস্তারিত বা প্রচলিত নিয়ম অবশ্যই জানা থাকতে হবে। বিস্তারিত নিয়ম জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে লিখিত পরীক্ষার গণিত অংশেও ভালো করা যাবে।
একটি দ্রব্য নির্দিষ্ট পরিমাণ শতকরা লাভ বা ক্ষতিতে বিক্রি করা হলে সেই দ্রব্যের ক্রয়মূল্য বের করার শর্টকাট সূত্র আছে। এ ধরনের কিছু সহজ শর্টকাট সূত্র দিয়ে শতকরার পাশাপাশি লাভ-ক্ষতি ও কাজ সম্পাদনের অঙ্ক করা শেখা যেতে পারে। তবে সাবধান! শর্টকাটের পেছনে সময় দিতে গিয়ে বিস্তারিত নিয়মে গণিত অনুশীলন থেকে দূরে থাকা যাবে না।
গণিত শেখার কৌশল
গণিতে প্রস্তুতির শুরুতে নিজের লেভেলটা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি দক্ষতার লেভেল খুব দুর্বল থাকে, তাহলে পঞ্চম শ্রেণির বই দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। এরপর ষষ্ঠ থেকে পর্যায়ক্রমে নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইগুলো অনুশীলনের চেষ্টা করুন। বড় বড় যোগ, গুণ, ভাগ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে করার অভ্যাস করতে হবে। এর জন্য সব নামতা ঠোঁটস্থ করে ফেলুন। গণিতে আপনার অবস্থা যেমনই হোক, এর জন্য নিয়মিত কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন। বাসায় যত বেশি চর্চা করবেন, পরীক্ষার হলে ততই দ্রুত সমাধান করতে পারবেন। পরীক্ষায় সাধারণত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। তাই ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক করার অভ্যাস করুন। গণিতের সূত্রগুলো পড়ার টেবিলের সামনে টাঙিয়ে প্রতিদিনই দু-একবার চোখ বুলিয়ে নিন। তাহলে মনে থাকবে।
সিলেবাস ধরে ধরে অধ্যায়ভিত্তিক অনুশীলন করুন। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর ওপর বাড়তি নজর দিন।
কোনো একটি অঙ্ক সমাধানের আগে প্রশ্নটি মন দিয়ে পড়ুন। কী করতে হবে, তা প্রশ্নের নির্দেশনায়ই দেওয়া থাকে। আপনি অঙ্কটির যে সমাধান করতে যাচ্ছেন, প্রশ্নেও ঠিক সেই সমাধানটিই চেয়েছে কি না, সেটি আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি কোনো অঙ্কের সমাধান করতে গিয়ে বারবার আটকে যান, তাহলে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে অন্য প্রশ্নে চলে যেতে পারেন। পরীক্ষার শেষের দিকে সময় থাকলে অসম্পূর্ণ অঙ্কটির সমাধানের চেষ্টা করবেন।
গণিতের বেসিক শক্ত হলে পরে বাজারের প্রচলিত ভালো মানের এক বা একাধিক গণিতের বই কিনে অনুশীলন শুরু করুন। সমাধান না দেখে নিজে নিজেই চেষ্টা করুন। সমাধান দেখে দেখে অঙ্ক করলে নিজের অনেক দুর্বলতা নজরে আসবে না!
গণিত প্রশ্ন বিশ্লেষণ
বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসা অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন বিশ্লেষণ থেকে একজন প্রার্থী সহজেই ধারণা পাবেন—সাধারণত কোন অধ্যায় থেকে প্রতিবছর কেমন প্রশ্ন আসে। প্রশ্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমেই তুলনামূলক বেশি ও কম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শনাক্ত করা যাবে। এখানে শুধু সিলেবাসভুক্ত টপিকের ওপর প্রশ্ন বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে। সিলেবাসের বাইরের টপিক থেকেও কিন্তু মাঝেমধ্যে প্রশ্ন আসে।
* গণিতের প্রশ্ন বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো।
-এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
লেখক: ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি,