প্রেজেন্টেশন বানানোর নিয়মাবলী : প্রেজেন্টেশন কিভাবে শুরু করতে হয় জানুন
দেশে কনফারেন্স আর বিদেশে কনফারেন্স এটেন্ড করে বুঝলাম একটা মৌলিক পার্থক্য রয়ে গেছে। দেশীয় কনফারেন্সে বেশির ভাগ কাজ আসে ব্যাচেলর ডিগ্রির থিসিস থেকে। ফলে যাই আসে সব মোটামুটিভাবে পূর্ণাঙ্গ কাজ। একটা থিওরি, মডেল আর এরপরে রেজাল্ট দেখিয়ে কোন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই শেষ। এই কাজ গুলোর ফলোয়াপ নিয়ে তেমন আলাপ আলোচনা হয় না।
এই প্রথম মনে হচ্ছে একটা প্রকৃত কনফারেন্সে আছি। যে কাজ গুলো আসছে সেগুলোও ছাত্র দের ই করা। তবে তারা পি এইচ ডি ছাত্র। যা প্রেজেন্ট করা হচ্ছে তা ওয়ার্ক অন প্রগ্রেস। প্রশ্নোত্তর পর্বে জিজ্ঞাসা করা অনেক প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে কাজ এখনো চলছে, আমরা উত্তর এখনো জানি না। এইটাই আসলে রিসার্চ। উত্তর জানি না। দেশে কনফারেন্সে প্রশ্ন উত্তর পর্বে প্রশ্ন করার স্টাইল থাকে খানিক নিজের জ্ঞান জাহির করা আর খানিক প্রেজেন্টেশন যে দিচ্ছে তার জ্ঞান কত টা দেখার জন্য। সে কারণে আসলে কাজ টা ঠিক কত টা ভাল, কিংবা এই কাজের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ নিয়ে প্রশ্ন খুব কমই থাকে। তারচেয়েও বড় কথা, প্রেজেন্টার উত্তর না দিতে পারলে মনে মনে খানিক লজ্জাও বোধ করে। কারণ টা আসলে সেই ব্যাচেলর ডিগ্রি মানসিকতার সাথে যুক্ত। থিসিস ডিফেন্সে প্রশ্ন করা হয় বেসিক নলেজ চেক করার জন্য, আর খানিক প্রেজেন্টেশন নিয়ে। সেখানে প্রশ্নোত্তর না পারলে মার্ক কাটা যায়। কিন্তু কনফারেন্সে মার্ক কাটার ব্যাপার নাই। তাই প্রশ্নোত্তর পর্বে কিছু না জানলে, জানি না, জানার জন্য কাজ চলছে এই উত্তর দেয়ায় লজ্জা নাই।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেই হয়ত বুদ্ধি করে এই উত্তর দেয়, কাজ চলছে। কিন্তু আসলেই কি কাজ চলছে? ব্যাচেলর থিসিস শেষ, এরপরে পেপার লিখে কনফারেন্সে দেখানোও শেষ। আর কাজ করে কে? এরকমই অনেক ছাত্র ছাত্রীর মানসিকতা। কনফারেন্সে আসলে যাওয়া হয় নতুন কাজের আইডিয়া নিয়ে আসার জন্য। সুতরাং কনফারেন্সে যখন এই রকম উত্তর দেয়া হবে, কাজ চলছে। তখন মনে চিন্তা থাকতে হবে যে আসলেই আমরা কাজ চালিয়ে নেব। যা জানলাম, যা শিখলাম, তা থেকে নতুন কাজে মনোযোগ দেয়ার শিক্ষা নেয়াটাই কনফারেন্সে যাবার সার্থকতা।
এখানে ব্যাচেলর শেষে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে আলাপ করলাম না। অনেকে চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগে কাজ আগিয়ে নেয়া এমন কি কাজ যেটা হয়েছে তা কনফারেন্স বা জার্নালের জন্য লিখতে চায় না। সেটা অন্য আলাপ। আরেক দিন হবে। তবে যাদের সুযোগ আছে তাদের এই লেখা নিয়ে চিন্তার অনুরোধ করছি।
একই সাথে, কনফারেন্স এটেন্ড করে মনে হল, দেশ হোক বা বিদেশ, এই জানা কথা গুলো সবাই ভুলে যায় নানা সময়ে। তাই আবার মনে করিয়ে দিই-
প্রেজেন্টেশন বানানোর নিয়মাবলী-
- ১) যত কম কথা লিখা যায়। সব কিছু অবশ্যই বুলেট পয়েন্ট আকারে থাকতে হবে। প্রতি স্লাইডে এক দুইটা বুলেট পয়েন্ট থাকলে, যেখানে স্লাইডের সামারি করা হয়েছে, স্লাইড বুঝতে সুবিধা হয়। লেখা অবশ্যই প্রচলিত ফন্ট এবং সাইজের হওয়া উচিত।
- ২) এনিমেশন ব্যবহার ভাল। বিশেষ করে এক স্লাইডে অনেক কিছু থাকলে, কথা বলার সাথে সিনক্রোনাইজ করে বিভিন্ন ফিগার টেবিল এপেয়ার করা উচিত।
- ৩) প্রতি টা ফিগারের ওপর ফিগারে কি বলা হচ্ছে লিখে দেয়া উচিত। ফিগার এর লিজেন্ড এবং লেবেল খেয়াল রাখা লাগবে যেন পড়া যায়। দৃষ্টিকটু রং ব্যবহার না করা ভাল। এক্সপেরিমেন্টাল ডাটা, পয়েন্ট আকারে আর সিমুলেশন রেজাল্ট, লাইন আকারে দেখাতে হয়।
- ৪) অনেক অনেক রো কলাম সহ টেবিল আসলে থাকা উচিত না। কেউ খুটে খুটে পড়ে না। এই টেবিল গুলো যদি কোন কম্পারিজন এর কাজে ব্যবহার হয়, তাহলে টেবিল কে ফিগারে কনভার্ট করে নেয়া ভাল।
- ৫) এক স্লাইডে দশ বারো টা ফিগার দিয়ে দিলে, কোন টা বাদে কোনটায় তাকাবো তা বুঝতেই স্লাইডে বরাদ্দ সময় চলে যায়। এই জন্য এক স্লাইডে পাশাপাশি দুই থেকে চার টা ফিগার এর বেশি যাওয়া উচিত নয়। আমাদের বোঝার ক্ষমতা টপ, রাইট, লেফট আর বটমেই সীমিত।
- ৬) অবশ্যই শুরুতে আউটলাইন আর শেষে সামারি স্লাইড থাকা উচিত। তাহলে টকের বিষয় জেনে বুঝে শুরু করা যায়, আবার শেষে গিয়ে পুরো টক রিভিশন হয়ে যায়। স্লাইডের নাম্বার করা উচিত, যাতে প্রশ্নোত্তর পর্বে যেয়ে স্লাইড নাম্বার ধরে ধরে প্রশ্ন করা যায়.
- ৭) প্রতিটা প্রেজেন্টেশন কে একটা গল্পের মত সাজিয়ে নেয়া ভাল। টেকনিকাল পয়েন্ট বোঝানোর জন্য গল্প বলা জরুরি, তাই স্লাইডে কিছু সংখ্যা দেখিয়ে, সংখ্যার পেছনের মোটিভেশন আর সংখ্যার দ্বারা ভবিষ্যৎ প্রেডিকশন ব্যাখ্যা করা উচিত। সংখ্যা রিডিং যারা টক শুনতে এসেছে তারা পড়তে পারে।
কষ্ট করে এত বড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
tags:
প্রেজেন্টেশনের শুরুতে কি বলতে হয়
বাংলা প্রেজেন্টেশন
প্রেজেন্টেশন শুরু করার নিয়ম
প্রেজেন্টেশন পোস্ট
প্রেজেন্টেশন টপিক
প্রেজেন্টেশন টপিক বাংলা
ইংরেজিতে প্রেজেন্টেশন
প্রেজেন্টেশন কাকে বলে
প্রেজেন্টেশন লেখার নিয়ম